×

পদ্মা সেতুর ৫ হাজার ২৫০ মিটার দৃশ্যমান

নিজস্ব প্রতিবেদক : পদ্মা সেতুর মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ৮ ও ৯ নম্বর পিয়ারের (খুঁটি) ওপর বসানো হয়েছে ৩৫তম স্প্যান। এর ফলে দৃশ্যমান হলো সেতুর ৫ হাজার ২৫০ মিটার। শনিবার বেলা দুইটা ৪০ মিনিটের দিকে স্প্যানটি সফলভাবে বসানো হয়।

৩৪তম স্প্যানটি বসানোর ৭ দিনের মাথায় এই স্প্যান বসানো হলো। সেতুতে আর মাত্র ৬টি স্প্যান বসানো বাকি রইল। গত ২৫ অক্টোবর ৩৪তম স্প্যানটি বসানো হয়েছিল।

সেতু সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুক্রবার টু-বি স্প্যানটি সেতুর ৮ ও ৯ নম্বর পিয়ারের ওপর বসানোর কথা ছিল। পিলারের কাছে পানির গভীরতা কমে নাব্যতা সংকট তৈরি হওয়ায় স্প্যানটি ওই দিন বসানো যায়নি। শুক্রবার খননকাজ শেষ করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হয়।

সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের জানান, খননের মাধ্যমে পলি সরিয়ে নদীতে নাব্যতা বাড়ানো হয়েছে। শনিবার সকাল ৯টার দিকে মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেন ‘তিয়ান-ই’ ধূসর রঙের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের স্প্যানটিকে নিয়ে রওনা হয়। বেলা ২টা ৪০ মিনিটে স্প্যানটিকে সফলভাবে বসানো হয়। আগামী ৫ অথবা ৬ নভেম্বর পরবর্তী স্প্যান বসানো হবে। বাকি স্প্যানগুলো ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে বসানোর পরিকল্পনা আছে।বিজ্ঞাপন

সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, ৫ অথবা ৬ নভেম্বর ২ ও ৩ নম্বর খুঁটিতে ৩৬তম স্প্যান (স্প্যান ১-বি), ১১ নভেম্বর ৯ ও ১০ নম্বর খুঁটিতে ৩৭তম স্প্যান (স্প্যান ২-সি), ১৬ নভেম্বর ১ ও ২ নম্বর খুঁটিতে ৩৮তম স্প্যান (স্প্যান ১-এ), ২৩ নভেম্বর ১০ ও ১১ নম্বর খুঁটিতে ৩৯তম স্প্যান (স্প্যান ২-ডি), ২ ডিসেম্বর ১১ ও ১২ নম্বর খুঁটিতে ৪০তম স্প্যান (স্প্যান ২-ই) এবং আগামী ১০ ডিসেম্বর ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর ৪১ নম্বর স্প্যানটি (স্প্যান ২-এফ) বসানোর কথা আছে। সবগুলো স্প্যান মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে আছে।

পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব। এর মধ্যে গত ৩০ সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, ১ হাজার ৪১টির বেশি রোড স্ল্যাব বসানো হয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত বসানো হয়েছে ১ হাজার ৫০০টির বেশি।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে বসানো হয়েছে ৩৪টি স্প্যান। ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত এই প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ দশমিক ৫০ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮৭ দশমিক ৫৫ ভাগ। নদী শাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৭৪ দশমিক ৫০ ভাগ। এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৭৯৬ দশমিক ২৪ কোটি টাকা।

মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর ওপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।

প্রকৃতি, ঐতিহ্য এবং ভালবাসার হাতছানিতে বাগেরহাট

শতাব্দী আলম : ষাটগম্বুজ মসজিদের মেঝেতে সেজদায় মনে অপার্থিব শিহরণ ছিলো। দেয়ালের ভাঁজে ভাঁজে কারুকার্জমন্ডিত ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের গৌরবময় শোভায় দৃষ্টির গভিরতা থমকে দাড়ায়। তালাপের নির্মল জল, শান বাঁধানো ঘাট আর মহিরুহ বৃক্ষগুলো শান্তির সুবাতাসে প্রান জুড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের জেলা বাগেরহাট। সাগর, সুন্দরবন আর খানজাহান আলী (র.) এর আধ্যাত্মিকতার পুন্যভুমি বাগেরহাট। বাংলাদেশ জুড়ে যে শান্তির দখিনা বাতাস বয়ে যায়। এই প্রকৃতি আর আধ্যাত্মিকতার মেলবন্ধনে তার উৎপত্তি। বাংলাদেশে বেড়ে উঠা হৃদয়বান মাত্রই এই মেলবন্ধনের উপলব্দি রয়েছে। হয়ত পার্থিব টানাপোড়েনে দখিনের প্রতি এই অপার্থিব টান কখনো অনুভুত হয় না। তবু মনের অজান্তেই ক্লান্ত পথিক একটু প্রশান্তির খোঁজে ছুটে আসে বার বার। আমরাও সেই টানে ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের দশ জন বাগেরহাট এলাম দেখলাম প্রান জুড়ালাম ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার।

বুধবার রাত দশটায় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে যাত্রা শুরু। যদি হয় সুজন তেতুল পাতায় তিন জন। প্রবাদের যথার্থতা প্রমান দিতে ৭ সিটের মাইক্রো গাড়িতে গাদাগাদিভাবে আমরা ১০ জন চড়ে বসলাম। সামনে চালকের পাশে বসা জাকির হোসেন ইমন ভাইকে সর্তক করা হলো কোনভাবেই ঘুমানো যাবে না। বুলবুল ভাই একথা বলার সাথে সাথে সবাই সমস্বরে সহমত। সফরের প্রধান সমণ¦য়ক সুমন ইসলাম। তিনি বার বার পরখ করছিলেন সবাই এলো কিনা। নিশ্চিত হতে একবার গণনাও করে নিলেন- ‘আচ্ছা পেছনের সিটে মনসুর- কাউছার আর সাফায়েত, মাঝে আলম-ফিরোজ ও বুলবুল ভাই, সামনে আছি আমি, ভিপি কুদ্দুস ও মেয়র জসিম ভাই (তিনি কটিয়াদিতে মেয়র নির্বাচন করবেন)। এক ফাঁকে সংক্ষিপ্তভাবে সফরের কিছু বিধান বাতলে খরচের টাকা তুলে নিলেন। বাঙালি মাত্রই কাজের আগে অতিত নিয়ে ঘাটাঘাটি করবে। আমরাও আগের আরো সফর নিয়ে আলোচনায় বেশ ছিলাম। বাধ সাধলো সিঙ্গাইরের গ্যারাইদা এলাকায় দূর্ঘটনাকবলিত ট্রাকের প্রতিবন্ধকতায়। পুলিশ র‌্যাকারে প্রায় এক ঘন্টার কসরতে ট্রাক সরিয়ে আবার রাস্তা চলাচলের জন্য মুক্ত করলেন। দ্বিতীয় চিন্তা কিভাবে দ্রুত পাটুরিয়া ঘাটে ফেরিতে পারাপার করা যাবে। এ নিয়ে কমবেশী সবাই নিজ নিজ মতামত ব্যক্ত করলেন। বিধি বাম। ফেরিঘাটের কাছাকাছি সিএনজি স্টেশনে গ্যাস নাই। গ্যাসের খোঁজে আবার ঢাকার দিকে উল্টো ছুট। কাজে-অবসরে আমরা যতই এগিয়ে যেতে চাই। দেশের আমলাতান্তিক জটিলতা কোন না কোনভাবে পেছনে টানে। গ্যাস স্টেশন আছে গ্যাস নাই। দশ কিলোমিটার পেছনে এসে গ্যাস পাওয়া গেলো। যা হোক ভোর ছয়টায় বাগেরহাট সার্কিট হাউজে এনডিসি মহোদয়ের সৌজন্যে আন্তরিক অভ্যর্থনা পেলাম। ঘন্টা দু’য়েকের বিশ্রামে দেহের ক্লান্তি আর আমলাভ্রান্তি দুইই কাটলো।

শুভসকাল বাগেরহাট। সার্কিট হাউজের সামনে পতাকা বেদিতে গ্রুপ ছবির মাধ্যমে আমাদের সফর কর্মসুচি শুরু। খানজাহান আলী (র.) এর দরগা যেতে প্রধান সড়কে মেইন গেটের উল্টো দিকে একটি হোটেলে সকালের নাস্তার জন্য বসলাম। সকাল সকাল একসাথে দশ জন খদ্দের পেয়ে ছোট্ট হোটেল মালিকের মুখে চওড়া হাসি। বড় মাটির চুলায় লাকড়ির ধুমায়িত আগুনে আটা রুটি শেকা শুরু করলেন। মাটির মটকা থেকে লোটা দিয়ে পানি তুলে প্লাস্টিকের মগে ঢালা হলো। আমি মটকার পানি লোটা থেকেই গ্লাসে ঢেলে নিলাম। এক ঢুক পানি গলা দিয়ে নামতে যেন দেহ-মনে শান্তির নহর ছড়ায়। রুটির সাথে ঘন করে রান্না মশারির ডাল। আন্তরিক পরিবেশনা আর এক্কেবাড়ে খাঁটি স্বাদে সত্যিই তৃপ্তির সকাল। দেশের প্রান্তিক মানুষগুলো এখনো নিজেদের কাজে আন্তরিক বলেই আমরা যান্ত্রিকতায় অভ্যস্তরা ক্ষনিকের জন্য তাদের সংস্পর্শেই সুখ পাই। কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার সব শ্রেনী পেশার মানুষের মাঝেই এটা পাওয়া যায়। এই যে আজকের সকালে একজন মানুষ আটা রুটি শেকে খাওয়াচ্ছেন। তার মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। পড়নের লুঙ্গিটা আগোছালো। স্যান্ডো গেঞ্জিটা কাঁধের কাছে ফুটো। অথচ কি নির্মল হাসিমাখা মুখখানা। হাসিমুখে রুটি সেঁকে সেঁকে একটা একটা পাতে তুলে দিচ্ছেন। আমরা তৃপ্তি সহকারে খেলাম। গাড়ির চালকসহ এগারজনের নাস্তা খরচ মাত্র ২০০ টাকা। পাশের দোকানে খেলাম গরুর খাটি দুধের মালাই চা। চা বানানোর কায়দা একটু অন্যরকম। চাপাতা গরম পানিতে কড়াভাবে ফুটিয়ে গরম দুধের সাথে মিক্স করা হলো। তারপর ভালভাবে ফিটে আবার একটা মগে নিয়ে গরম করা হয়। সে বললো, কারন দুধ-চা মিক্স ফিটার সময় কিছুটা ঠান্ডা হয়। ঠান্ডা চা’এ আসল স্বাদ থাকে না। কাপে ঢেলে সাথে কিছুটা মালাই ভাসিয়ে খেতে দিলো। হ্যাঁ আমরা খুশি। বাগেরহাটে সকালটা বেশ ভাল শুরু হয়েছে।

হযরত খানজাহান আলী (র.) এর কথা নতুন করে আর বলার নেই। উপমহাদেশে যে ক’জন আউলিয়া ইসলাম ধর্ম প্রচারে এসেছেন তিনি তাদের মাঝে অন্যতম। আউলিয়ার দরগা জিয়ারত শেষে আমরা গ্রুপ ছবি তুললাম। দরগা পুকুরের ঘাটলায়ও গ্রুপ ছবি তুলা হলো। পুকুরে এখনো কুমির আছে। তবে আমাদের দেখার সৌভাগ্য হয়নি। পুকুরপাড়ে নারকেল বেদিতে তুলা ছবি ফেইসবুকে সর্বাধিক লাইক পরেছে। হতে পারে আমাদের জিয়ারতে মহান সাধকের সন্তুষ্টি এর কারন। এসব কিছু পার্থিব বিষয় শুধুই বিশেষন। আল্লাহ’র বান্দা আউলিয়া গণের কামালিয়াত্ম আরো অনেক উচ্চ মার্গের যা আমাদের মত সাধারণের বোধগম্যের উর্দ্ধে। একটি জনপদে কত শ্রেনী পেশার মানুষ। প্রান্তিক জনগোষ্ঠি থেকে উচ্চবিত্ত, রাজনীতিক বা উচ্চ শিক্ষিত। তারা কিন্তু কালের গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। যুগের পর যুগ শতাব্দিকাল ধরে আল্লাহর সাধকগণ মানুষের মুক্তির পথপ্রদর্শক হিসেবে স্মরণীয় বরনীয়।

আমাদের পরের গন্তব্য ষাটগম্বুজ মসজিদ। বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাসের প্রতীক ষাটগম্বুজ মসজিদ। ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত বিশ্ব ঐতিহ্য। মূল ফটকের ডানদিকে বাগেরহাট জাদুঘর। জাদুঘরে দেখার সময় দর্শনার্থীদের একজন নারী বুঝাচ্ছিলেন, ছাদগম্বুজ থেকে ষাটগম্বুজ নামকরণ। জানতে চাই, এর ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা কি? আপনাকে কে এই তথ্য দিয়েছে। তিনি বলতে পারলেন না। প্রত্নতাত্তিক নিদর্শনের মনগড়া ইতিহাস বলা কোনভাবেই ঠিক না। কর্তৃপক্ষের এব্যপারে নজর দেয়া উচিত। প্রবেশমুখের বামদিকে শিশুদের জন্য কিছু রাইড রয়েছে। ষাটগম্বুজ মসজিদ প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন একইসাথে এটি খানজাহান আলী (র.) এর আধ্যাত্মিক সধানার প্রতীক। এখানে বিনোদনের এই বিষয়গুলো পরিবেশের ভাবগাম্ভির্য ক্ষুন্ন করে। প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনকে তার আদি রুপে সংরক্ষণ করার প্রতি মনযোগী হওয়া প্রয়োজন, সাথে এর পরিবেশ প্রকৃতিও। প্রত্নতত্ত্ব কর্তৃপক্ষ এ বিষয়গুলোতে নজর দিবেন আশা করি। আমরা ষাটগম্বুজ মসজিদের স্থাপত্যশৈলী খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছি। চারদেয়ালের প্রবেশদ্বার, দেয়ালের গঠন, গম্বুজের ভিন্ন ভিন্ন আকার, মিম্বরের কারুকাজ, পশ্চিমদিকের দেয়ালে খিলান, বাহির প্রাচীর, মসজিদের পশ্চিমের দেয়াল পুকুরপাড় কোন কিছুই বাদ দেইনি। মসজিদের সামনে দুইদিকে দুটি রেইনট্রি বৃক্ষ। পেছনে দুটি পাম গাছ। ঠিক জানিনা এগুলোর বয়স কত ? আমরা অনেকক্ষণ ছিলাম। মসজিদে দুইরাকাত নফল নামাজ আদায় করেছি।
আমাদের পরবর্তী গন্তব্য চন্দ্রমহল ইকোপার্ক। ভুলবশত দশানী পার্ক ঘুরা হলো। সেখান থেকে চন্দ্রমহল ইকোপার্কে। স্ত্রীর প্রতি ভালবাসার নিদর্শন চন্দ্রমহল। ঠিক করেছি চন্দ্রমহল নিয়ে আলাদা নিবন্ধ লিখবো। কারন একজন মানুষের ভালবাসার মাহাত্ম বুঝাতে এত স্বল্প পরিসরে কুলোবে না। শুধু এটুকু বলবো বাগেরহাট এলে ক্ষনিকের জন্য হলেও চন্দ্রমহলে ঘুরে যাবেন। মহলের মেঝেতে দাড়িয়ে একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন। আপনার জীবনে এমন কেহ কি ছিলো বা আছে যাকে উৎসর্গ করে একটি মহল বানাতে পারেন। আমার কিন্তু এমন একজন প্রেমিকা রয়েছে। পার্কের মাঝে একজন কুমার মাটির সুভ্যেনিউর তৈরী করেন। ফুলদানি, কলমদানি, হাড়ি, কলস, শরা। যা কিছু নিবেন ৩০ টাকা মূল্য। শিল্পির দাবি ভেষজ গুনসম্বলিত কুমোর মাটি দিয়ে তিনি এসব তৈরী করছেন। আমরা অনেকেই বিশ্বাস করে কমবেশী সুভ্যেনিউর সংগ্রহ করলাম।

বিকেলে মোংলা বন্দর পরিদর্শন করার কথা । সন্ধার পর ফেরার পথে মোংলা বন্দর পরিদর্শন করেছি। বিকেলে মোংলা বাস স্ট্যান্ডে একটি হোটেলে গলদা চিংড়ি ভোনা দিয়ে ভাত খেয়েছি। ঘাষিয়াখালি চ্যানেল পাড় হয়ে মোংলা পৌরসভা। সেখানে পশুর নদীর বেড়িবাধে হেটে বিকেল কাটালাম। সন্ধায় দেখা করতে আসেন মোংলার সাংবাদিক মোঃ নুরুল আমিন। তিনি সবাইকে মোংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি দুলাল ভাইয়ের অফিসে নিলেন। এর আগে মোংলা প্রেসক্লাব দেখেছি। দুলাল ভাই খুবই আন্তরিক। আতিথিয়েতা করে যেন কোনভাবেই তৃপ্ত হচ্ছিলেন না। বার বার বললেন, রাতে থাকার ব্যবস্থা করি, নিজের বোটে সুন্দরবন ঘুড়াবো। আবার ফিরে আসার আকর্ষন রাখতেই যেন সুন্দরবন ঘুড়ার ইচ্ছা রহিত করলাম। সুন্দরবন আগেও দেখেছি। তাইবলে একটুকুও আকর্ষন কমেনি। প্রকৃতি এমনই। বার বার তার কাছে ফিরে যেতে মন চায়। সুন্দরবন ঘুরে যে কবিতা সাজিয়েছিলাম ‘সোনারং হৃদয়’ গ্রন্থে আছে। একটি পঙক্তি মনে পড়ে গেলো। ‘‘বনের মাঝে পদচিহ্ন এঁকে দিয়েছি, কবিকে এখানেই মানায়, আমাকে পাবে বনের পদচিহ্ন খুঁজে, তোমাদের মাঝে আসবো নকল সাজে।’’ জীবনানন্দের কথাতো আর ফেলতে পারি না। ‘‘সব পাখি ঘরে ফেরে, ফুরায়ে জীবনের সব লেনদেন…’’আমরা পরিকল্পনামাফিক সন্ধা ৭টায় ঘরে ফেরার উদ্দ্যেশে রওনা করি।

শতাব্দী আলম
৩১/১০/২০২০

ঢাকায় বিক্ষোভ, ফরাসি পণ্য বয়কটের দাবি


নিজস্ব প্রতিবেদক : মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে কটাক্ষ করে ফ্রান্সে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। আজ শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় শেষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে থেকে মিছিলটি বের করা হয়। পরে পল্টন মোড় হয়ে মিছিলটি বিজয়নগর মোড়ে গিয়ে বেলা আড়াইটায় শেষ হয়।

মিছিলটি যখন বিজয়নগর মোড়ে গিয়ে পৌঁছায়, তখন কিছু লোক পুলিশের ব্যারিকেড সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশের বাধায় মিছিলটি সেখানে শেষ হয়। তবে ছোট ছোট কিছু ব্যানার সেখানে পুড়িয়ে আগুন ধরানোর চেষ্টা হয়।

জুমার নামাজের পর কয়েক শ মুসল্লি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের গেইট থেকে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। অধিকাংশ মুসল্লির হাতে ছিল প্লাকার্ড। ফ্রান্সের পণ্য বর্জন করাসহ নানা ধরনের বক্তব্য এসব প্লাকার্ডে লেখা ছিল।

একজন মুসল্লি বলেন, ফ্রান্সে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গ কার্টুন প্রদর্শন করার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ মিছিল। তিনি বলেন, ‘ফ্রান্সের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে ফ্রান্সের পণ্য বর্জন করার দাবি জানাচ্ছি।’

বিক্ষোভ মিছিলে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর কুশপুতুল বহন ও পরে তা দাহ করা হয়

বায়তুল মোকাররমের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হওয়ার আগ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বায়তুল মোকাররমের সামনে থেকে মিছিল শুরু হওয়ার পর কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় মিছিলটি বিজয়নগর মোড়ে আসে।

১৬ অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিসের শহরতলিতে এক শিক্ষককে গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহত ওই শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়াতেন। ক্লাসে তিনি শিক্ষার্থীদের মহানবী (সা.)-এর কার্টুন দেখিয়েছিলেন। এ ঘটনাকে ঘিরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর মন্তব্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

‘শেখ হাসিনা’ উদ্ধাস্তু থেকে মানবতার জননী

শতাব্দী আলম : ‘এদের (রোহিঙ্গা) দুঃখ-দুর্দশা আমি গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর আমার ছোট বোনকে নিয়ে ছয় বছর উদ্ধাস্তু জীবন কাটিয়েছি।’ জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেছেন। শেখ হাসিনার পক্ষেই এমন অবলিলায় নিজের জীবনের দুঃসময়ের কথা বলা সম্ভব। আজ ২৮ সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিন। বিশ্ব যখন শরণার্থী সমস্যায় হাবুডাবু খাচ্ছে তখন একজন সরকার প্রধান হিসাবে নিজের উদ্ধাস্তু জীবনের কথা স্মরণ করে মানবিক মূল্যবোধকে সম্মাণিত করেছেন। উদ্ধাস্তু বা শরণার্থী মানে একজন মানুষের জীবনের সব শেষ নয়। উদ্ধাস্তু জীবন থেকে সাহস ও শক্তি সঞ্চয় করে আবার ঘুরে দাড়ানো সম্ভব। বিশ্বের সর্বোচ্চ ফোরামে দাড়িয়ে সে কথাই বিশ্ব বিবেককে স্মরণ করিয়ে দিলেন। বিশ্বের লাখ লাখ উদ্ধাস্তু শরণার্থী শিশুর মাঝেই লুকিয়ে আছে নতুন কোন শেখ হাসিনা। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালিও ভারতে উদ্ধাস্তু বা শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় পেয়েছিল। রোহিঙ্গা উদ্ধাস্তুদের আশ্রয় দিয়ে বাঙালি তার জাতীয় মানবিক ঋণ লাঘব করেছে। বিশ্ব দরবারে একজন সত্যিকারের মানবতার জননী হিসাবে শেখ হাসিনার অবদান দিন দিন উজ্জল্য ছাড়াচ্ছে। শুভজন্মদিনে সৃষ্টিকর্তার কাছে কায়মন বাক্যে প্রার্থনা করছি তিনি যেন দ্রুত সুস্থতা লাভ করেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বারবার আমরা শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা সময়োপযোগী নেতৃত্বের প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করেছি। কোন দ্বিধাদ্বন্দে না ভোগেই শরণার্থীদেয় আশ্রয় ও সহযোগীতার হাত বাড়ানো এর সর্বশেষ উদাহরণ। প্রতিবেশী ভারত সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে একেক সময় একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছেন। যেমন গত ২১ সেপ্টেম্বর ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বললেন, ‘রোহিঙ্গারা হচ্ছে অনুপ্রবেশকারী।’ অনুপ্রবেশকারী, উদ্ধাস্তু বা শরণার্থী যে নামেই ডাকা হোক না কেন! আশ্রয় পাওয়া ওইসব মানুষের অধিকার। ১৯৭১’এর বাঙালি উদ্ধাস্তু আর ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা উদ্ধাস্তুদের মধ্যে কোন তফাৎ নেই। বাঙালি পল্লিকবি জসিমউদ্দিনের ‘দগ্ধ গ্রাম’ কবিতার একটি পঙতিতে ১৯৭১ এর বাস্তব চিত্র যেমন জ্বজল্যমান রয়েছে তেমনি ২০১৭ সালের রাখাইন রাজ্যের নারকীয় ধ্বংশযজ্ঞের চিত্রও ফুটে উঠেছে। ‘‘কিসে কি হইল, পশ্চিম হতে নরঘাতকেরা আসি, সারা গাঁও ভরে আগুন জ্বালায়ে হাসিল অট্টহাসি, মুহুর্তে সব শেষ হয়ে গেল ভষ্মাবশেষ গ্রাম, দাড়ায়ে রয়েছে দগ্ধ দুটি আধ পোড়া খাম।’’ পশ্চিম পাকিস্তানের দূর্বৃত্ত্ব শাসকের লালায়িত সেনাবাহিনীর হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, লুটপাট থেকে রক্ষা পেতে বাঙালি উদ্ধাস্ত হয়েছে। ঠিক একইভাবে মায়ানমার সেনাবাহিনী দ্বারা রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, লুটপাট, ধর্ষণ চলছে। গ্রামের পর গ্রাম আগুনে ভষ্মিভুত। বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ নচেৎ নৃশংস হত্যার শিকার। বাধ্য হয়েই হিন্দু- মুসলিম- খ্রীস্টান ওইসব রোহিঙ্গা মানুষ উদ্ধাস্তু হয়েছে। তাঁরা কোনভাবেই অনুপবেশকারী হতে পারে না। ভারত সরকার ১৯৭১ সালে বাঙালি উদ্ধাস্তুদের আশ্রয় দিয়েছিল। সেজন্য বাঙালি হিসাবে আমরা অবশ্যই তাদের কাছে ঋণী এবং চিরকৃতজ্ঞ। কিন্তু সেখানে তাদের ঐতিহাসিক স্বার্থ জড়িত ছিল। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদেও ঘিওে বাংলাদেশের কোন স্বার্থ নেই। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় কেবলই মানবিক দায়বদ্ধতা। শেখ হাসিনা জাতিসংঘের অধিবেশনে দাড়িয়ে সে কথাই বলেছেন।
লেখার শিরোনাম ‘উদ্ধাস্তু থেকে মানবতার জননী’ শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন এবং সাফল্যের ইঙ্গিত বহন করে। শেখ হাসিনা কেবল তাঁর উদ্ধাস্তু জীবনের কথা বলেছেন। কিন্তু বাঙালি মাত্রই জানেন বঙ্গবন্ধু কণ্যার বাল্যকাল, কৈশর, যৌবন থেকে রাজনৈতিক জীবনও নানান চড়াই-উৎড়াই সংগ্রামের মাঝে যাচ্ছে। প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি অত্যন্ত সততা, দৃঢ়তা এবং সাফল্যের সাথে মোকাবিলা করেছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যাও তিনি দৃঢ়তা এবং সাফল্যের সাথে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। রোহিঙ্গারা যদি কোনদিন তাদের অধিকার ফিরে পায় সেজন্য শেখ হাসিনার অবদানই সব থেকে বেশী স্মরণ করা হবে। এই মানুষটি শিশু কিশোর বেলায় বিপ্লবী পিতার সংসর্গ আদর স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। পিতা বঙ্গবন্ধু জীবনের ১৮টি বছর কাটিয়েছেন কারাগারে। মুক্তজীবনে বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষের অধিকারের প্রশ্নে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই খুব বেশী সময় পরিবারের সংস্পর্শে থাকার সুযোগ পাননি। তিনি যৌবনে পিতা মাতাসহ পরিবারের সব সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হতে দেখলেন। ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট হত্যা চেষ্টা ছিল ভয়াবহতম। এত কঠিন জীবন সংগ্রামের শিড়ি মাড়িয়ে টিকে থাকা এবং নিজ জাতির নেতা হওয়া মহান আল্লাহপাকে নেক রহমতেই সম্ভব। ২০০৭ সালে শেরেবাংলা নগরের সাব জেলে বসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের ভুমিকা লিখতে গিয়ে ব্যক্তি শেখ হাসিনার আবেগের কিছুটা প্রতিফলিত হয়েছে। ‘‘ছোট বোন শেখ রেহানাকে ডাকলাম। দুই বোন চোখের পানিতে ভাসলাম। হাত দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে পিতার স্পর্শ অনুভব করলাম। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি; তারপরই এই প্রাপ্তি। মনে হল যেন পিতার আশীর্বাদের পরশ পাচ্ছি। আমার যে এখনও দেশের মানুষের জন্য- সেই মানুষ, যারা আমার পিতার ভাষায় ‘দুঃখী মানুষ’, – সেই দুঃখী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কাজ বাকি, তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজ বাকি, সেই বার্তাই যেন আমাকে পৌছে দিচ্ছেন। যখন খাতাগুলোর পাতা উল্টাছিলাম আর হাতের লেখাগুলো ছুঁয়ে যাচ্ছিলাম আমার কেবলই মনে হচ্ছিল আব্বা আমাকে যেন বলছেন, ভয় নেই মা, আমি আছি, তুই এগিয়ে যা, সাহস রাখ। আমার মনে হচ্ছিল, আল্লাহর তরফ থেকে ঐশ্বরিক অভয় বাণী এসে পৌঁছাল আমার কাছে। এত দুঃখ-কষ্ট-বেদনার মাঝে যেন আলোর দিশা পেলাম।’’ আজকে যখন সদ্য প্রসূত রোহিঙ্গা শিশুর নাম রাখা হয় ‘শেখ হাসিনা’। তখন বলতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনি সত্যিই শান্তির দূত যিনি পিতার আর্শীবাদে মানবিকতার মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। একজন সত্যিকারের ‘মানবতার জননী’
সেপ্টেম্বর এলেই বিশ্বে ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার’ দেওয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। কারন ৬ অক্টোবর শুক্রবার সকাল এগারটায় নরওয়ের নোবেল কমিটি সে বছরের শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে। আশান্ত পৃথিবীতে যে কোন শান্তি পুরস্কারেরই আবেদন অনেক বেশী। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিই হচ্ছে শান্তিতে থাকা। সুখে থাকা। বিশ্বের এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনা অবদান রেখেছেন। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদি মাওবাদি নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে হাসিনা সরকার। মাওবাদিদের সাথে ভারতের বিজেপি সরকার আলোচনা শুরু করে। বর্তমানে মাওবাদিরা রাজনীতির মুলধারায় ফিরে আসছে। যা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠার সহায়ক। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে উপজাতি অধ্যুসিত পার্বত্য চট্রগ্রামে বিচ্ছিন্ন সংহিসতা লেগেই থাকত। শেখ হাসিনা সরকার ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধান করেন। বর্তমানে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদি গোষ্ঠিারা চিরতরে বিদায় হয়েছে। বিশ্বে জঙ্গি ও সন্ত্রসবাদী একটি প্রকট সমস্যা। মধ্যপ্রাচ্যে আইএস বা আলকায়েদা, মায়ানমারের মগ-উগ্র রাখাইন বৌদ্ধ, ভারতের উগ্র হিন্দুত্যবাদী, ইসরাইলের ইহুদীবাদি গোষ্ঠি, ইউরোপ-আমেরিকায় সাদা-কালো মানুষের ভেদাভেদসহ কোথায় নেই সন্ত্রাসবাদ। বিগত বছর গুলোতে বাংলাদেশের ভূখন্ডেও এমন কয়েকটি সন্ত্রাসবাদের ঘটনা মাথা চাড়া দিয়েছে। সাম্প্রতিক অতিতে বাংলাভাইয়ের নেতৃত্বে জেএমবির আর্বিভাব হয়েছে। সব জঙ্গি সংগঠন এবং জঙ্গি দলের সদস্যদের কঠোরভাবে দমন করতে সমর্থ হয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। গোয়েন্দা তৎপড়তার মাধ্যমে চিন্থিত করে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জঙ্গি আস্তানা। সবশেষে এসেছে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা। শেখ হাসিনা প্রথম দিন থেকেই রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয় এবং নিজ দেশে পূর্ণবাসনের লক্ষ্যে আত্ম নিবেদিত হয়েছেন। নিজের উদ্ধাস্তু জীবনের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে রোহিঙ্গাদের সহমর্মী-সহযাত্রী। জার্মান চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মার্কেলও ইউরোপে নিজ দেশে শরণার্থী আশ্রয় দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু প্রিয় পাঠক বাংলাদেশ এবং জার্মানির আর্থ সামাজিক অবস্থা এক নয়। সীমিত ভুখন্ড এবং দেশে খাদ্য সংকট থাকা সত্বেও বাংলাদেশ সরকার শরণার্থীদের আশ্রয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। দল-মত নির্বিশেষ সর্বস্তরের মানুষ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা করছে। ইতমধ্যেই জাতিসংঘের অধিবেশনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা অত্যন্ত সফলভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। এটা বাংলাদেশের জন্য সম্মানের এবং শেখ হাসিনার জন্য গর্বের। এবার নোবেল শান্তি পুরস্কার যে কেহই পেতে পারে। তবে বিশ্বের বিবেকবান মানুষের হৃদয়ে নবজাতক ‘রোহিঙ্গা শেখ হাসিনা’ শান্তির প্রতীক হিসাবে বেঁচে থাকবে।

লেখক ঃ সাংবাদিক ও কলাম লেখক

This is just for test

This is just for test

This is just for test

This is for test

This is for Test

This is just for test

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন স্বপ্নযাত্রা


এম এম হেলাল উদ্দিন : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। জাতির পিতার আধুনিক বাংলাদেশ মানে বিশ্বের অন্য প্রান্তের ঝকঝকে তকতকে শহরই না। তিনি বলতেন, ‘আমি মানুষের অধিকার চাই।’ তিনি স্বপ্ন দেখতেন বাংলাদেশের মানুষও হবে উন্নত ও মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মুজিব শতবর্ষকে স্মরণীয় বরণীয় রাখতে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জন্য খাদ্য বস্ত্র ও বাসস্থানের সুব্যবস্থা করার কথা বলছেন।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অতন্দ্র প্রহরী জাহাঙ্গীর আলম। বঙ্গবন্ধু কণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসাবে তাঁর প্রতিটি আদেশ উপদেশ মেনেই জাহাঙ্গীর আলম কাজ করেন। মুজিব শতবর্ষে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন স্বপ্নযাত্রা দৃশ্যমান হচ্ছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করার পর থেকে প্রতিটি মুহুর্ত সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নে এক অর্থবছরে সর্বাধিক প্রায় সারে ৮ হাজার কোটি টাকা উন্নয়ন বরাদ্দ দিয়েছেন। বছর পেরুতেই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে উন্নয়ন দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে । পুবাইল থেকে চক্রবর্তী বা টঙ্গী থেকে কাউলতিয়া সবদিকে উন্নয়নের জোয়াড়।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নের কথা বলতে প্রথমেই আসবে এর মাষ্টার প্লানের কথা। দেশে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনেই প্রথমবারের মত একটি মাষ্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই পরিকল্পণা মন্ত্রনায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন মাষ্টার প্ল্যান প্রাথমিক অনুমোদন করেছে। মেয়রের ভাষ্যমতে, একটি আধুনিক সিটি কর্পোরেশন গড়ে তুলতে মুজিব শতবর্ষের অঙ্গিকার হচ্ছে মাষ্টারপ্ল্যান অনুযায়ী গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে সাজানো।
প্রতিটি ওয়ার্ডের পুরাতন সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে। নতুন করে নির্মিত সড়ক কমপক্ষে ৪০ ফুট প্রশস্ত করা হচ্ছে। সড়কের মাঝে পরিবেশ বান্ধব সড়ক বিভাজক। সেখানে সবুজ বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। সুনির্দ্দিষ্ট দুরত্বে স্থাপন করা হচ্ছে সড়ক বাতি। এসব সড়ক বাতি যখন রাতে প্রজ্জলিত হয় এলাকায় দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ ফুটিয়ে তুলে। সড়কের পাশে পায়ে হাটার ফুটপাথ বেশ প্রশস্ত।
আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা সুবিন্যস্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। আঞ্চলিক গ্রহস্থালী পানি নিষ্কাশনের জন্য সড়কের একদিকে ড্রেনেজ ব্যবস্থা। সেখান থেকে মূল সড়কে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। মূল সড়কের দুইদিকেই ড্রেন। এতে খুব সহজেই পানি সরাসরি নদী বা বিলে পরিবাহিত হবে। প্রাকৃতিক খাল পুনরুদ্ধার ও খনন করা হয়েছে। তুরাগ নদীকে সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। মাষ্টারপ্ল্যান ব্যস্তবায়িত হলে তুরাগ হবে লন্ডনের টেমস।
মেয়র আবর্জনা পরিস্কার ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন শিল্প এলাকা হিসাবে অন্যান্য সিটির চাইতে বেশী জঞ্জাল বহন করে। যে কারনে মেয়র এই জঞ্জাল মুক্ত করতে আধুনিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক গার্বেজ ট্রাক আনা হয়েছে। প্রতিটি পাড়া মহল্লা থেকে আবর্জনা বহনের জন্য প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক কর্মী কাজ করছেন। সেখান থেকে স্থানীয় সেকেন্ডারী ডাম্পিংএ রাখা হয়। তারপর গার্বেজ ট্রাক মূল ডাম্পিংএ নিয়ে যায়। লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে। এখন আর মহাসড়কের পাশে কোন ময়লার ভাগার নেই। এখন এই আবর্জনাকে সম্পদে রপান্তরের কাজ চলছে। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আবর্জনা থেকে সার, বিদ্যুত ও গ্যাস উৎপাদন করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে জাপানের সাথে চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। অচিরেই আবর্জন ব্যবস্থাপনা গাজীপুর সিটি হবে দেশের সবথেকে স্মার্ট সিটি।

তাছাড়াও পানি সরবরাহ, সড়ক বাতি, বিদ্যুৎ সরবরাহ, পরিবহন ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের লক্ষ্য উন্নয়নের স্বপ্নযাত্রা বাস্তবায়ন। জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু।
লেখক : সাংবাদিক ও শিক্ষাবন্ধু

Hello world!

Welcome to WordPress. This is your first post. Edit or delete it, then start writing!